লুপ্তপ্রায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শৈশবে…
‘শৈশব’ শব্দটা শুনলেই কেমন যেন একটা ঝাপসা কল্পনার জগৎ চলে আসে চোখের পাতায়। আমাদের গ্রাম বাংলার শৈশব যেন দিনের পর দিন হারিয়েই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হারিয়েই যাচ্ছে, গ্রাম বাংলার নিত্য দিনের অনেক খেলাধুলা। এখন সেসব খেলার কথা মনে হলে, মনে পড়ে যায় খেলার সঙ্গীদের কথা। মনে পড়ে যায়, শৈশবের হারিয়ে যাওয়া খেলা আর স্মৃতির কথা। শিশু মানেই দৌড়ঝাঁপ কোলাহল আর দুরন্তপনা। দুরন্তপনা ছাড়া যেন শৈশব কল্পনাই করা যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন শিশুরা হারাতেই চলেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শৈশবের বহুলাংশ। হারাতেই চলেছে যেন শৈশবের সেই চঞ্চলতা। আর চোখেই পড়ে না বন-বাদাড়ে ঘুড়ে বেড়ানোর সেই গ্রামীণ দৃশ্য। লুপ্তপ্রায়, গাছের মগডালে উঠার গ্রামীণ অভিজ্ঞতা। মনে পড়ে যায় সেই ঐতিহ্যবাহী শৈশবের কথা। যখন কিনা গাছের ডালে বসে গল্প করা হতো, যেটা দেখতে ছিল অনেকটাই ভূতের মতোই। দিনের পর দিন যেন শিশুরা হারাতেই চলেছে লাফ- ঝাফ আর সাঁতার কাটা। আর যেন চোখেই পড়ছে না চাঁদের আলোয় লুকোচুরি খেলানোর সেই গ্রামীণ দৃশ্য। আজ শিশুরা হারাতেই চলেছে যেন রূপকথার গল্প শুনার সেই গ্রাম্য রীতি। ঘুমপাড়ানি গান শুনতে শুনতে ঘুমানোটাই ছিল শিশুর নিত্য দিনের অভ্যাস। আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিশুরা যেন হারাতে চলেছে হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য। ভার্চুয়াল গেইমসের কারণে, আজ শিশুরা যেন হারাতে চলেছে বদন, গোল্লাছুট ও কানামাছি ভূঁ-ভূঁ এর মতো গ্রাম বাংলার নিত্য দিনের আরও অনেক খেলাধুলা।দিনের পর দিন শিশুরা যেন হারাতে চলেছে মিষ্টি খড়-কুটার মাঝে হামাগুড়ি খাওয়ার গ্রামীণ দৃশ্য। আর যেন চোখেই পড়ছে না শিশুদের কাঁদা মাখা বদনে মুর্তি সাজার দৃশ্য। যেন হারাতেই চলছে মুখে কালি মেখে মেঘ ডাকার সেই গ্রামীণ দৃশ্য। কালের বিবর্তনে, শিশুরা যেন ভুলেই যাচ্ছে ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর দৃশ্য। হারিয়ে যাচ্ছে যেন বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করা আর পাড়া মাতানোর গ্রামীণ চিত্র। আধুনিকতার ছোঁয়ায়, আর যেন দেখাই যাচ্ছে না বর্ষার ভেলায় শিশুদের ভেসে বেড়ানোর গ্রামীণ দৃশ্য। দিনের পর দিন যেন হারাতেই চলেছে শীতের সকালে রোদ পোহানোর দৃশ্য হারাতেই চলেছে যেন আগুন পোহানো আর গল্প করা। আর যেন চোখেই পড়ছে না পুকুরে নেমে "ডুপনল" খেলার গ্রামীণ দৃশ্য। কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের পুতুল বিয়ে দেওয়ার গ্রামীণ দেওয়ার দৃশ্য। যেন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে বৌচি, মোরগ লড়াই, লাটিম ঘুড়ানো ও ঘুড়ি ওড়ানোর মতো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী আরো অনেক খেলাধুলার। তারপরও গ্রামীণ জনপদে এখনও কিছু খেলাধুলা চোখে পড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাও প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। একসময় গ্রামীণ সমাজের শিশুরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে অবসর সময় কাটাত। অথচ প্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের মঝে, বিশেষ করে শহরের শিশুদের মাঝে দুরন্তপনা যেন আর নেই বললেই চলে। ঘরে বসে কম্পিউটার মোবাইলে গেমস খেলতেই যেন তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই ভার্চুয়াল গেইমসে আসক্ত হওয়ার দরুণ শিশুরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অনেকাংশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যা আমাদের সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ। আমাদের শিশুদের, সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়তা করা আমাদেরই দায়িত্ব। আমরা বাঙালি আর বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদেরই।
Post a Comment