☆ মাহে রমজান
☆ রোযার শিক্ষা
☆ রোযার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
-
এক নজরে সঙ্কেতন:
- উপস্থাপনা
- রোযার পরিচয়
- আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ
- রিয়ামুক্ত ইবাদত
- তাকওয়া সৃষ্টি
- আল্লাহর প্রেমের শিক্ষা
- দেহযন্ত্রের বিশ্রাম
- চরিত্র গঠনে রোযা
- রোয়া ঢালস্বরূপ
- নিয়মানুবর্তিতা
- ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি
- সাম্য প্রতিষ্ঠা
- আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনে রোযা
- উপসংহার
উপস্থাপনা :
যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত , রোযা তাদের অন্যতম । মুত্তাকী হওয়ার প্রধান প্রশিক্ষণ রোযা। রোযার মাধ্যমে আত্মসংযম , আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করে মানুষ প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে গড়ে ওঠে ।
রোযার পরিচয় :
রোযা ফারসি শব্দ , আরবিতে একে সাওম বলা হয় । এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা , আত্মসংযম ও কঠোর সাধনা । ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় , আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় ইন্দ্রিয় তৃপ্তি , পানাহার হতে বিরত থাকার নামই রোযা ।
আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ :
রোযা পালনের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে । এতে সে আত্মসংযম , আত্মনিয়ন্ত্রণ , সময়ানুবর্তিতা , ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার গুণ অর্জন করে ।
রিয়ামুক্ত ইবাদত :
অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় রোযায় রিয়া বা লোক দেখানোর কোনো সুযোগ নেই । তাই রোযা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসারই নিদর্শন ।
তাকওয়া সৃষ্টি :
রোযাদার ব্যক্তি যাবতীয় পাপাচার ও পানাহার হতে দূরে থাকে । ক্ষুধা , তৃষ্ণায় কাতর হলেও মহান আল্লাহর ভয়ে সে এসব থেকে বিরত থাকে । এতে তার মধ্যে তাকওয়া বা খোদাভীতি সৃষ্টি হয় ।
আল্লাহ প্রেমের শিক্ষা :
রোযাই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার প্রতি প্রেম ও ভালোবাসার নিদর্শন । এটা কোনো লোক দেখানো ইবাদত নয় । তাই তো আল্লাহ বলেন , “ রোযা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেব । " রাসূল ( স ) ইরশাদ করেন , “ রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মৃগনাভীর চেয়েও প্রিয় । "
দেহযন্ত্রের বিশ্রাম :
হৎপিণ্ড , যকৃত , পাকস্থলী , মূত্রাশয় ইত্যাদির রীতিমতো বিশ্রামের প্রয়োজন আছে । সিয়াম সাধনার দ্বারা পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত থেকেই শুধু দেহযন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়া যেতে পারে ।
চরিত্র গঠনে রোযা :
চরিত্র গঠনে রোযার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রোযাদার ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায় ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয় । ফলে সে সচ্চরিত্রবান হয়ে ওঠে ।
রোযা ঢালস্বরূপ :
রোযা মানুষকে ক্রোধ , হিংসা , লোভ - লালসা ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত রাখে । তাই তো মহানবী ( স ) ইরশাদ করেছেন , “ রোযা ঢালস্বরূপ । ”
নিয়মানুবর্তিতা :
রোযাদার ভোররাতে সাহরী গ্রহণ এবং সারাদিন উপবাস থাকার পর সূর্যাস্তের পর ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা গ্রহণ করে ।
ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি :
রোযাদার ব্যক্তি উপবাসের দ্বারা দরিদ্রের অনাহারের কষ্ট উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় । এতে ধনী-দরিদ্রের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয় ।
সাম্য প্রতিষ্ঠায় রোযা :
আল্লাহর নির্দেশ পালনে ধনী-দরিদ্র সকলকে রোযা পালন করতে হয় । এতে প্রমাণিত হয় , আল্লাহর হুকুম পালনে সবাই সমান । এটা সাম্য প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত ।
আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনে রোযা :
রোযা মানুষের মধ্য থেকে লোভ-লালসা , হিংসা-বিদ্বেষ , মিথ্যা-প্রতারণাসহ যাবতীয় পাপাচার দূর করে আদর্শ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ করে । এভাবেই রোযাদার ব্যক্তি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
উপসংহার :
রোযা মানবচরিত্র গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় । রোযা শুধু ধর্মীয়ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয় ; বরং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনেও রোযার ভূমিকা অনস্বীকার্য । রোযার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই আমাদের ইসলামের হারানো মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে ।
Post a Comment